1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :

আজ জাতীয় শোক দিবস

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২
  • ৩১০ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: রাতের শেষ প্রহর। বাইরে প্রবল গুলির শব্দ। চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে দিনের প্রথম প্রহর। সেই শব্দে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় বঙ্গবন্ধুর। এটি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের আগস্টের এক রাত উপন্যাসের একটি অংশ। এই উপন্যাসের পটভূমি তিনি তৈরি করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের নৃশংস ঘটনা নিয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৬১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি আর নানা তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে লেখক এ উপন্যাস রচনা করেছেন।

ওরা বলে এখন ভোর, কিন্তু জীবন পানে তাকিয়ে আমি দেখি রাত্রি, ঘোর অমানিশা। কবিতাটি লিখেছিলেন বেলুচিস্তানের কবি মির গুল খান নাসির। এই কবিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় নিয়ে প্রথম কবিতা বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। পরে অবশ্য বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত লেখক সেই রাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক কবিতা, গল্প লিখেছেন। এই শোকের কান্না বইতে থাকবে কালান্তর। বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার ও অভিশপ্ত হচ্ছে সেই ভোর। কোনো এক গায়ক তার কণ্ঠে সুর তুলেছেন, ‘এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ভোর সোয়া পাঁচটা। ধানমন্ডির ৩২ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। বাঙালির মুক্তির আঁতুর ঘর। নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে এমন সাধারণ বাড়িতেই বাস করতেন। কে জানত বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সেনা সদস্যের বুলেটের বৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর বুক ঝাঁঝরা হয়ে যাবে। ঘাতকরা যখন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে তখন বৃষ্টি ঝরছিল। এ যেন প্রকৃতির অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে। কেঁদেছে সারা বাংলা।

স্বাধীনতার সূতিকাগার নামে খ্যাত এই ধানমন্ডির বাসায় যারাই ছিলেন তারা কেউ রেহাই পাননি ঘাতকদের হাত থেকে। ছোট শিশু রাসেলের আর্তচিৎকার ছিল। এই চিৎকারে খোদার আরশ কেঁপে উঠলেও, টলাতে পারেনি খুনিদের পাষাণ মন। রাসেল চিৎকার করে বলেছিল, আল্লাহর দোহাই আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না। আমার হাসুু আপা দুলাভাইয়ের সঙ্গে জার্মানিতে আছে। আমি আপনাদের পায়ে পড়ি, দয়া করে আপনারা আমাকে জার্মানিতে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। মৃত্যুর আগে খুনিদের কাছে এই ছিল তার আকুল আবেদন। (ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে ঘটনা ও বাংলাদেশ)।

ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি। তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল শেখ জামাল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী কামাল, বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ মেয়ে বেবি, নাতি সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা সহধর্মিণী আরজু মনি, আবদুল নাইম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিল। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। আজকের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সে সময় বেলজিয়ামে অবস্থান করছিলেন। তবে সেদিন প্রথম শহীদ হন শেখ কামাল। সেদিনই বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল।

১৫ আগস্ট ইতিহাসের ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যারা কলঙ্কিত করেছে তাদের রক্ষায় ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর সেই খুনিদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। প্রথমবারের মতো জাতির পিতার বিচারের দাবি তোলা হয় ১৯৭৯ সালে ১০ মে সুইডেনের স্টকহোমে সর্ব ইউরোপীয় বাকশালের এক সম্মেলন থেকে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়। এরপরই বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। নানা বাধা পেরিয়ে বিচার সম্পন্ন হয়। তবে পরবর্তী সময়ে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের সময় এ রায় কার্যকরে বাধা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মৃত্যুদণ্ডের পাঁচজনের রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয়।

আরও এক আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল। এ ছাড়া পলাতক রয়েছে- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এএম রাশেদ চৌধুরী ও এসএইচএম নূর চৌধুরী।

অন্নদা শংকর রায় লিখেছিলেন, যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৯৬ সালে তিনি বিজয় দিবসে সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকা আসেন। ঢাকা সফরকালে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোনো প্রেক্ষাপটে তিনি এই পংক্তিচরণ লেখেন? অন্নদা শংকর অকপটে বলেছিলেন, একটা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে, পাকিস্তানের কারাগারে মুজিবকে মেরে ফেলা হয়েছে। খবরটা শোনার পর মন ব্যথায় ভরে যায়। পরে যখন শোনেন বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন। এরপরই তিনি এই কবিতা লেখেন। তিনি আরও বলেছিলেন, মুজিবের মৃত্যু কি সহজ কথা? তিনি তো অবিনশ্বর।

সৈয়দ নাজিমউদ্দিন হাশেম ‘শেখের সমসাময়িক, স্মৃতিপটে শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ শীর্ষক এক প্রবন্ধের এক জায়গায় লিখেছেন, ‘জীবদ্দশায় মুজিব বিশালদেহী। পৃথিবীজুড়ে দাঁড়িয়েছিলেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। শেখ মুজিবের নামে ইতিহাস খুলে যায়। সেই দরজা দিয়ে আমরা আমাদের নিয়তির সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। যে মানুষের নামে ইতিহাসের দরজা খুলে যায় সেই মৃত্যুহীন মানুষের সঙ্গেই তো আমরা ইতিহাসের দীর্ঘ সড়কে হেঁটে যাব। স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে বিছিয়ে থাকা তার বিশাল শরীর আমাদের জীবনে বটের ছায়া। এ ছায়া থেকে আমরা দূরে যেতে পারব না। মুজিবের মৃত্যু সহজ কথা নয়।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :