অনলাইন ডেস্ক: অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মা নদীর আশে পাশের ফসলি পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে। ফলে কৃষকের শত শত একর জমির টমেটো, বেগুন, পিঁয়াজ, শসা, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে যাচ্ছে । অনেক কৃষক পানি নিষ্কাশন করে বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে জরিপ করছে গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর পাড়ে অনেক জমি জেগে উঠেছে। জেগে ওঠা আবাদি জমিতে কৃষক আগাম ফসল উৎপাদন করার জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। অনেক কৃষক আগাম ফসল লাগানোর জন্য জমি তৈরি করছে। অনেকে টমেটো, পিঁয়াজ, বেগুন, শাক-সবজি লাগিয়েছে। অনেক কৃষক এরই মধ্যে আগাম সবজি বাজারে বিক্রি করছে। এদিকে হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে উপজেলার পদ্মা পাড়ের শত শত একর জমির ফসল ডুবে যায়। কৃষক পানি নিষ্কাশন করে ডুবে যাওয়া ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
নাসির উদ্দীন সরদার পাড়ার কৃষক আলিমদ্দিন সরদার বলেন, আমাদের স্বপ্ন এখন বৃষ্টির পানি নিচে। আগাম এই ফসল নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। ফসল উঠে পাওনাদারের দেনা পরিশোধ করবো। ছেলে-মেয়েদের চাহিদা পূরণ করবো। স্ত্রী এবং অসুস্থ বাবা-মায়ের কাপড় কিনে দিব। কিন্ত অতিবৃষ্টিতে আমাদের বেগুন, টমেটো ডুবে গেছে। পুনরায় এই ফসল চাষ করতে ২০-২৫ দিন পিছনে পরে গেলাম। এই জমিতে চাষ করতে পারলেও এবার লাভের মুখ দেখতে পারব না বরং এবার অনেক লোকসান গুনতে হবে।
একই গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকার আগাম ফসল উৎপাদন করি। এবারও টমেটো, বেগুন ও পিঁয়াজ লাগিয়েছি। কিন্ত হঠাৎ বৃষ্টির কারণে আমার টমেটো, বেগুন ও পিঁয়াজ পানিতে ডুবে যায়।’
তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া জমি জেগে উঠতে আরও ৭/৮ দিন সময় লাগবে। এই জমিতে পুনরায় ফসল আবাদ করতে ১০/১২ দিন সময় লাগবে। এতে আমরা লাভবান হতে পারব না। বরং লোকসান গুনতে হবে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জুলমত শেখ নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। লাভ-লোকসান যেটা হোক কৃষি কাজ করে চলতে হয়। এবার হঠাৎ অতিবৃষ্টির কারণে আমাদের ৬ বিঘা জমির টমেটো ও বেগুন ডুবে যায়। ২০/২৫ দিনের মধ্যে এসকল ফসল আমরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারতাম। এখন পুনরায় ডুবে যাওয়া জমি জেগে উঠা না পর্যন্ত চাষ করতে পারব না। এতে এবার আমাদের অনেক লোকসান হবে।
উজানচর ইউনিয়নের কৃষক আজমত আলী বলেন, আমার ৩ বিঘা জমি টমেটো ডুবে গেছে। টমেটোর চারাগুলো অনেক বড় হয়েছিল। হয়তো ২০ দিন পর টমেটো বাজারে নিতে পারতাম। এখন আমার পুরো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ছালমা আক্তার বলেন, প্রতিদিন নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে অসময়ে নদীতে পানি বেড়ে যেতে দেখিনি আগে। এতে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খোকনুজ্জামান বলেন, উপজেলার ফসলি জমি পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে ১৮৫ হেক্টর। আরও ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জরিপ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পদ্মা নদীর পাড়ের জমি নিচু হওয়ার কারণে অনেক টমেটো, বেগুন ও শাক-সবজি ডুবে গেছে।
Leave a Reply